কল্পনা চাকমার অপহরণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরম লজ্জার: চট্টগ্রামে আলোচনায় শ্রমিক ফোরামের সভাপতি

0
664

হিল ভয়েস, ১৩ জুন ২০২১, চট্টগ্রাম: ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বিপ্লবী কল্পনা চাকমার অপহরণের সুষ্ঠু বিচার করতে না পারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরম লজ্জার’ বলে উল্লেখ করেন চট্টগ্রামের পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমর বিকাশ চাকমা(বাবু)।

গতকাল ১২ জুন ২০২১ বিপ্লবী কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম ফ্রি পোর্টে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একথা বলেন চট্টগ্রামস্থ পাহাড়ি শ্রমিকদের এই নেতা।

‘কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবেদন প্রকাশ ও লে: ফেরদৌস গংদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি’র দাবিতে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের বন্দর শাখার সভাপতি অমরবিন্দু চাকমা। উদ্দীপন চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমর কৃষ্ণ চাকমা(বাবু) এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা এবং আদিবাসী মহিলা ফোরামের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক তরিকা চাকমা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তাব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের নিউ মুরিং শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নব জ্যোতি চাকমা। তিনি বলেন, ‘আজ ১২ জুন। আজকের এই দিনে ১৯৯৬ সালে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িস্থ নিজ বাসা থেকে অপহৃত হন বিপ্লবী কল্পনা চাকমা। অপহণের পর দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদের পরও প্রকৃত অপহরণকারী সেনাবাহিনীর কম্যান্ডার লে: ফেরদৌস গংদের শাস্তি দেয়া হয়নি। এতে রাষ্ট্র তার দায় এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রকে অবশ্যই একদিন এর জবাব দিতে হবে।’

প্রধান অতিথি বলেন, ‘কল্পনা চাকমা মুক্তিকামী জুম্ম নারী সমাজের সংগ্রামী লড়াকু সৈনিক ছিলেন। প্রগতিশীল আদর্শের মাধ্যমে সমাজে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আজকের এই দিনে সেনাবাহিনীর লে: ফেরদৌস এর নেতৃত্বে কাপুরুষোচিতভাবে অপহরণের শিকার হন তিনি। অপহরণের ২৫ বছরেও ঘটনার যথাযথ প্রতিবেদন প্রকাশ ও অপহরণকারীরদের শাস্তি দিতে পারে নাই রাষ্ট্র। কল্পনা চাকমার অপহরণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য চরম লজ্জার।’

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, ‘দীর্ঘ এই ২৫ বছরে ৩৯ জন তদন্তকারী অফিসার দায়িত্ব নিলেও বিপ্লবী কল্পনা চাকমার অপহণের যথাযথ প্রতিবেদন দিতে না পারায় রাষ্ট্র ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। শুধু কল্পনার অপহরণ ঘটনা নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য পার্বত্য চুক্তি’ বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্র জুম্ম আদিবাসীদের সাথে চরম অমর্যাদা ও বেইমানি করে চলেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বোধোদয় হওয়া উচিত এবং আদিবাসীদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।’

উল্লেখ্য, বিপ্লবী কল্পনা চাকমা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ১২ জুন দিবাগত রাতে তার বড় দুই ভাইসহ অপহরণের শিকার হন বাঘাইছড়ির নিজ বাড়ি থেকে। পরে তার ভাইদের খোঁজ ফেলেও খোঁজ মেলেনি কল্পনা চাকমার।