হিল ভয়েস, ২১ জুন ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে বহিরাগত কিছু বাঙালি ও রোহিঙ্গা কর্তৃক থনওয়াই ম্রো নামের এক ম্রো গ্রামবাসীর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী থনওয়াই ম্রো তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাবেক নেতা ফজল করিম সাঈদী এবং তার ঘনিষ্ট সহযোগী রোহিঙ্গা, বর্তমানে আলিকদম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পূর্ব পালং পাড়ায় বসবাসকারী উলা মিয়া (৪০), পীং-মৃত আমির হামজা এই ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তাদের সহযোগী হিসেবে কক্সবাজারের চকরিয়ার দেলোয়ার হোসেন ওরফে মনিক্কা (৪০), গ্রাম-পালাকাটা, আব্দুল শুক্কুর, মোঃ সাজ্জাদ (২৮), গ্রাম-হাল কাকারা, মোঃ পটু (৪৫), গ্রাম-ডুলুহাজারা এবং আলিকদমের চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের মোঃ তারেক (২৩), পীং-বাবুল মিয়া, গ্রাম-ফুটের ঝিরি, ৪নং ওয়ার্ড, মোঃ মুবিন (২৩), পীং-আক্তার হোসেন বুলু, গ্রাম-পানির ঝিরি, ৫নং ওয়ার্ড প্রমুখ ব্যক্তিগণ জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ১৩ জুন ২০২৫ আলিকদম থানায় সাধারণ ডাইরি (জিডি) করে ভুক্তভোগী থনওয়াই ম্রো লিখিতভাবে উক্ত ব্যক্তিগণ তার ভূমি বেদখল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছেন, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছেন এবং হত্যা করার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ফজল করিম সাঈদী ও উলা মিয়া কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় থিতু হয়ে নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ফজল করিম সাঈদী, প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের গবেষণার সুবাদে কাঠ সরবরাহের মাধ্যমে এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং পরবর্তীতে এলাকা দেখভালের দায়িত্ব পান। এ সুযোগে সেখানে তারা হাঁস-মুরগি ও গরুর খামার গড়ে তোলেন এবং পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, উলা মিয়া ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর অশ্বমনি ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কেনার দাবি করে ভূমি অফিসে নামজারির আবেদন করেন। তবে উপজেলা কানুনগোর জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বিক্রেতা ও ক্রেতা- দুজনেই ওই জমির দখলে নেই বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে নামজারির আবেদন বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
অপরদিকে, থনওয়াই ম্রো, পিতা-লাংরত কারবারি দীর্ঘ বছর ধরে ভূমিটি ভোগদখল ও আবাদ করে আসছিলেন। এমনকি ১৯৮১ সাল থেকে নিয়মিত খাজনাও দিয়ে আসছেন।
গত ২০২৫ সালের ১২ জুন রাতে কে বা কারা পুকুর এলাকার একটি ঘরে ভাঙচুর চালায়। এর জের ধরে ১৭ জুন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে থনওয়াই ম্রো সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি নালিশি দরখাস্ত দাখিল করা হয়। আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাজমুল হোসাইন আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আলিকদম থানাকে।
এ বিষয়ে অভিযুক্তরা দাবি করেছেন, তারা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত নন এবং ঘটনাস্থলেও উপস্থিত ছিলেন না। বরং তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।
বাহাদুর নামের এক ব্যক্তি জানান, সাবেক চেয়ারম্যান ফজল করিম সাঈদী তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে চাপ দিয়েছিলেন, যেন তিনি স্বীকার করেন যে, পুকুরের জমিটি সাঈদীর ক্রয়কৃত জমি। এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপরও হুমকি-ধমকি আসতে থাকে।
থনওয়াই ম্রো অভিযোগ করেন, “হামলাকারীরা বলেছে, ‘এই জমি এখন আমাদের, চলে যাও, না হলে খারাপ ফল হবে।” থানায় অভিযোগ করতে গেলে উল্টো তাঁর পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টাও হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সাবেক মেম্বার খাইডেন ম্রো, লেংরু ম্রো, সুকুমার ত্রিপুরা, মোঃ শাহ আলম ও মোঃ ফয়েজ প্রমুখ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা উলা মিয়া দীর্ঘদিন ধরে চৈক্ষ্যং এলাকায় থেকে পাহাড়ি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জমি দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কর্মকান্ডের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সুসংগঠিত একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। তারা আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনায় পাহাড়ি জনগণের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। তারা দ্রুত প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা নাগরিক উলা মিয়া ভোটার হতে না পেরে চকরিয়া পৌরসভায় তথ্য গোপন করে ভোটার হন এবং পরে আলিকদম উপজেলায় স্থানান্তরিত হন। এতে যেসব জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।