হিল ভয়েস, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, বান্দরবান: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারিসহ আটককৃত ৬ জনের মধ্যে ৪ নিরীহ চাক গ্রামবাসীর ১৩ দিন পরও হদিশ নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে আটককৃত অপর ২ জনকে অমানুষিক মারধর ও আটক রাখার চার দিন পর মিথ্যা মামলায় জড়িত করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সেনা ও বিজিবি কর্তৃক ১৪ দিন ধরে আটক থাকা ব্যক্তিরা হলেন- কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারী মংলাফো চাক (৬০), চিংলাঅং চাক (৫০) ও তাঁর এক ছেলে মংলাথোয়াই চাক (২০), লাগ্যছু চাক (৫৫)। তারা সবাই কামিছড়া চাক পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে আটককৃত ৪ ব্যক্তির পরিবারের লোকজন গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা ইতোমধ্যে আটককৃতদের হদিশ না জানার বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি গ্রহণ করেনি বলেও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া, পরিবারের লোকজন ইতোমধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ অন্যান্য মুরুব্বিদের কাছেও বিষয়টি অবহিত করেন। এ বিষয়ে সমাধান চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরেও আবেদন জানানো হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কোথাও তারা সমাধান পাননি।
উল্লেখ্য, আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আটককৃত কোনো ব্যক্তিকে আদালতে বা পুলিশের নিকট হাজির করার আইনগত নিয়ম বা বিধান থাকলেও সেনাবাহিনী ও বিজিবি আটককৃত উক্ত ৪ জনকে বেআইনি ও অন্যায়ভাবে ১৪ দিন ধরে অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখেছে। এমনকি আটককৃতদের পরিবারকেও তারা জানতে দিচ্ছে না যে, আটককৃতদের কোথায় রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার সকালে আলিকদম জোনের সেনাবাহিনী ও নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের বিজিবি’র একটি যৌথ দল দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ায় যৌথ অভিযান চালায়। উক্ত অভিযানে সেনা ও বিজিবি সদস্যরা কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারী মংলাফো চাক (৬০), চিংলাঅং চাক (৫০) ও তাঁর এক ছেলে মংলাথোয়াই চাক (২০), লাগ্যছু চাক (৫৫), উথোয়াই হ্লা মার্মা (২৪) ও ম্যানরুম মুরুং (৬০) নামে ৬ নিরীহ আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক করে। আটক করার পর সেনা ও বিজিবি সদস্যরা কয়েকজন মহিলাসহ উক্ত ৬ গ্রামবাসীকে অমানুষিকভাবে মারধর করে। মারধরের সময় সেনা ও বিজিবি সদস্যরা “জেএসএস সন্ত্রাসীরা কোথায় থাকে, তাদেরকে কত টাকা চাঁদা দাও’ ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করে।
উক্ত ঘটনার পর থেকে সেনা ও বিজিবি সদস্যরা আটককৃত উক্ত ৬ জনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর সেনা ও বিজিবি সদস্যরা অমানুষিক মারধর ও আটক রাখার চার দিন পর উথোয়াই হ্লা মার্মা (২৪), পীং-মংদো মারমা ও ম্যানরুম মুরুং (৬০), পীং- মৃত ধুই থং মুরুং-কে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে।
জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র পক্ষ থেকে উথোয়াই হ্লা মার্মা ও ম্যানরুম মুরুং এর বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়। দন্ডবিধি ১৪৪, ৩৫৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭ ধারায় এই মামলা করা হয়। মামলায় উক্ত দুই জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা এবং বিজিবি সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণের মত মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়া, মামলায় উথোয়াই হ্লা মার্মা ও ম্যানরুম মুরুং-কে জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) এর কর্মী বলে উল্লেখ করা হয়, যা মিথ্যা বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জেএসএস নেতা জানান, এটা সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র একটি সাজানো মামলা। তাই তারা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়াভাবে উক্ত দুইজনকে জেএসএস’এর কর্মী বলে উল্লেখ করেছে। বাস্তবে তারা জেএসএস’র কোন পর্যায়ের কমিটির সদস্য নন।
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
             
             
                             
                             
                             
                                                     
                                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        