হিল ভয়েস, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, রাজশাহী: গতকাল ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ‘সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হোন’ স্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল- ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জগদীশ চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হ্লামংচিং মারমা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলন ও কাউন্সিলে জগদীশ চাকমা বলেন, বিষয়টি হাস্যকর হলেও সত্যি ইউপিডিএফ পিসিপি নিজেদের এক নাম্বার পিসিপি দাবি করে। জুম্ম জনগণ জানে, কারা সত্যিকার অর্থে জুম্ম জনগণের স্বার্থে কাজ করে। কারা এক নাম্বার আর কারা দুই নাম্বার সেটি জনগণই নির্ধারণ করবে। আসল কি নকল সেটা কাজের মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে। তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৮ বছরেও বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণকে সরকারের অনীহা বলে মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, ভূমি কমিশনের সভা বসলেই পিসিসিপি নামক সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন থেকে সভায় বাধা প্রদান করে এবং চুক্তি বাতিলের দাবি জানায়। জুম্ম জনগণ এবং ছাত্র সমাজকে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হতে হবে। যার জন্য দক্ষ, প্রায়োগিক, আদর্শিক কর্মী গড়ে তোলা প্রয়োজন।
অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পিসিপি পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র লড়াকু সংগঠন ছিল, এখনো আছে। জুম্ম জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই পিসিপি কাজ করে।
তিনি বলেন, আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক দর্শন, সংগঠনকে জানা, অধ্যয়নে সংগঠনের প্রতি টান বেড়ে যায়। সংগঠনকে ধারণ করতে পারলে কেউ সংগঠন ত্যাগ করার মানসিকতা লালন করবেনা।
হ্লামংচিং মারমা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ লংগদুর গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠন হয়েছিলো। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নয়, এটি একটি পাঠশালাও বটে। গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা ভেবেছিলাম পাহাড়ে পরিবর্তন আসবে, পাহাড়ীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু আমরা তার বিপরীত দেখতে পাই শাসকগোষ্ঠী আমাদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করছে, সেটেলার ও মৌলবাদীদের তৎপরতা বেড়েছে। আমাদের আত্ননিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে মুক্তির সঠিক পথ, দর্শন চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ইউপিডিএফ চুক্তির পরপরই শান্তিবাহিনীর প্রত্যাগত সদস্যদের হত্যার মধ্য দিয়ে সংঘাতের পরিস্তিতি তৈরি করে দিয়েছিলো। তারা জুম্ম জাতির আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। চুক্তির বিরোধিতা করে জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকে। সুতরাং ইউপিডিএফ এবং চুক্তি বিরোধীদের সাথে জনসংহতি সমিতির দ্বন্দ্ব ভাতৃঘাতি সংঘাত নয়, বরং আদর্শিক দ্বন্দ্ব বলতে পারি। আর আমরা সেটাই করছি যেটা জুম্ম জাতির জন্য কল্যাণকর।
পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমার সভাপতিত্বে উক্ত সম্মেলন ও কাউন্সিলে সঞ্চলনা করে একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার অর্থ সম্পাদক ময়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
সম্মেলন শেষে সুমন চাকমাকে সভাপতি, ময়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যাকে সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাচুর্য্য চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার ২৫তম শাখা কাউন্সিল সম্পন্ন হয়।