জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের আন্দোলনে তরুণ সমাজকে যুক্ত হতে হবে: সাধুরাম ত্রিপুরা

হিল ভয়েস, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য আমরা আন্দোলন করছি, এই আন্দোলনে তরুণ সমাজসহ আমাদের সবাইকে যুক্ত হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের একুজ্যাছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন এইসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ফারুয়া ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিন তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, এগুজ্যাছড়ির হেডম্যান সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা এবং বিলুপ্ত ঘোষিত শান্তিবাহিনীর সাবেক গেরিলা টনি বম।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি ২০২৫, ফারুয়া, বিলাইছড়ি এর আহ্বায়ক জীবন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সহ-সভাপতি নির্মল তঞ্চঙ্গ্যা। উক্ত গণসমাবেশে ফারুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত জুম্ম অংশগ্রহণ করেছেন বলেও জানা গেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস অত্যন্ত করুণ। সেই লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকে নিজেদের মূল্যবান জীবন হারিয়েছে, অনেকে জেলে গিয়েছে, অনেকে নিজের আদরের সন্তানকে হারিয়েছে, অনেকে উদ্বাস্তু হয়েছে। এইসব কিছুর বিনিময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ভবিষ্যত এখন এক অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক চুক্তি বিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন সৃষ্টি করে দিয়ে চলেছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই অপতৎপরতা ও অপচেষ্টা কখনোই শুভফল বয়ে আনবে না। ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা হবো নিপীড়িত মানুষের বন্ধু, আমরা হবো নিপীড়িত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের একেকজন লড়াকু সৈনিক। জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য আমরা আন্দোলন করছি, এই আন্দোলনে আমাদের সবাইকে যুক্ত হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মধ্যে দিয়ে সমস্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সবাইকে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, আমরা সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। আমরা অনেক আশা ভরসা নিয়ে চুক্তিতে উপনীত হয়েছিলাম। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো সরকারই সদিচ্ছা আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসেনি।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের অস্তিত্ব যদি না থাকে, তাহলে আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকবে না, আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকবে না, আমাদের ভাষাগুলো থাকবে না। আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলব। সেগুলো না হারানোর জন্যই আমাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পতাকাতলে এসে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

যুবনেতা সুমিত্র চাকমা বলেন, চুক্তি মোতাবেক যদি সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সংরক্ষণের জন্য আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতো, তাহলে আজকে পাহাড়ে বহিরাগত সেটেলার বাঙালিদের সংখ্যা বেড়ে যেতো না। আজ সেটা না হওয়ার কারণেই কতিপয় সেটেলার বাঙালিদের প্রতিবাদের কারণে পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত হয়।

তিনি আরো বলেন, ফারুয়া থেকে বিলাইছড়ি, বিলাইছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি, রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি থেকে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এলাকায় এলাকায় গণসংগঠন গড়ে তুলতে হবে, সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম ছাত্র যুব সমাজ তথা সমগ্র জুম্ম জনগণকে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

More From Author