রাঙ্গামাটিতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে আঞ্চলিক পরিষদের বিবৃতি

হিল ভয়েস, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এক বিবৃতি প্রদান করেছে। আজ রবিবার (২৪ নভেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিমল কান্তি চাকমা কর্তৃক উক্ত বিবৃতি প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৩০টি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। সহকারী শিক্ষক পদে ৭,০০০ (সাত হাজার) এর অধিক প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেয়ার জন্য কয়েক বার দিনক্ষণ ঠিক হলেও সেনা-মদদপুষ্ট বাঙালি সেটেলারদের বিরোধিতা ও হরতালের কারণে কয়েক বার স্থগিত করতে হয়।

কোটা বিরোধী ঐক্য জোট, রাঙ্গামাটির সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ ব্যানারে বাঙালি সেটেলাররা দেশের অন্যান্য জেলার চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণভাবে প্রযোজ্য শতকরা ৯৩ ভাগ মেধার ভিত্তিতে ও শতকরা ৭ ভাগ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করার দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর বরাবরে পেশ করে।

আঞ্চলিক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয় যে, ব্রিটিশ শাসনামল হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বরাবরই বিশেষ আইন ও বিশেষ শাসন ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে প্রণীত আইনসমূহের দ্বারা তা অদ্যাবধি চলমান রয়েছে।

সরকারের সকল কর্তৃপক্ষের নিকট এটি অবিদিত নয় যে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পর হতে দেশে সাধারণভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, উপজাতীয় কোটা ও অন্যান্য কোটা ব্যবস্থা চাকরি ক্ষেত্রে প্রবর্তন করা হয়। উক্ত কোটা ব্যবস্থার প্রেক্ষিতেই ২৩ জুলাই ২০২৪ তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশোধিত আকারে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে। উক্ত সাধারণ কোটা ব্যবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাকরিতে কোনকালেই প্রযোজ্য হয়নি এবং প্রযোজ্য হতেও পারে না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ‘ঘ’ খন্ডের ১৮ ধারায় উল্লেখ্য রয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি, আধা-সরকারি, পরিষদীয় ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকল স্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ করা হবে। চুক্তির উক্ত বিধান মোতাবেক ২৭ জুন ২০১৩ খ্রি: তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে উক্ত একই ধরনের বিধান বর্ণিত হয়।

রাঙ্গামাটি/খাগড়াছড়ি/বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (১৯৮৯ সনের ১৯/২০/২১ নং আইন) এর ধারা ৩২ এর উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত হয় যে, পরিষদ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার বজায় থাকবে।

সঙ্গতকারণে, এ যাবত উল্লিখিত চুক্তির বিধান, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনসমূহে বর্ণিত বিধান এবং চুক্তি বিধান মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুসরণে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করে আসছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আশা করে যে, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ এদের নিকট হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যাবলীর আওতাভূক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও অন্যান্য কার্যাবলীর সংশ্লিষ্ট পদের চাকরিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ক্ষেত্রে এ যাবতকালে যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধান (অনুচ্ছেদ ১৮), সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের বিধান (ধারা ৩২ এর উপ-ধারা ২) ও ২৭ জুন ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনুচ্ছেদ ১৮ মোতাবেক জারীকৃত বিধান অনুসরণ করে আসছে সে একই বিধান অনুসরণে সংশ্লিষ্ট সকল নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে জনস্বার্থে যথাশীঘ্র পরামর্শ প্রদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানবাধিকার কর্মী প্রীতিবিন্দু চাকমা বলেন যে, এভাবেই সেনা-মদদপুষ্ট বাঙালি মুসলিম সেটেলাররা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। সেটেলাররা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগে বাধা সৃষ্টি করেনি। হরতালের হুমকি দিয়ে গত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আহুত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা এবং ২২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আহুত টাস্কফোর্সের ১২তম সভাও বাধা প্রদান করে।

More From Author