“আর্তনাদ”

ভদ্রাদেবী তঞ্চঙ্গ্যা

এই পাহাড়ের বুকে হাজারো স্বপ্ন বুনি,
প্রজন্মের চিন্তার উন্মেষ ঘটানোর,
যে চিন্তা হবে,
নারী মুক্তি ও অস্তিত্ব রক্ষার।
প্রজন্মের বৈষম্যহীন চেতনায় উদিত হবে নতুন ভোর,
নক্ষত্রের মতোই আলো দিবে নতুন প্রজন্ম।
যাদের প্রচেষ্টায় পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে,
সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
তখনি পাহাড়ের বুকে আলো ছড়াবে।
সুবাসিত ফুলের গন্ধে ভরে যাবে পাহাড়।

কিন্তু হঠাৎ,
রাষ্ট্র আমার স্বপ্ন পূরণের বাধা হয়ে দাঁড়ালো,
আমার শেকড়, আমার জন্মভূমি কেড়ে নিলো,
আমায় পরিচয় নির্ধারণ করে দিতে চাইলো,
সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে
দিল মিথ্যে মামলা,
বোনের ধর্ষিতার বিচার চাইতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ করা হলো,
আমার ঘরবাড়ি দিয়েছে পুড়িয়ে,
আমার বোনের উপর চালিয়েছে নিপীড়ন,
ধর্ষণের পর করেছে হত্যা
তবুও রাষ্ট্র করেছে নীরবতা পালন।

পাহাড়ের বুকে আমার স্বপ্ন,
সমস্ত পাহাড় বেয়ে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর,
ঝর্ণার শব্দের সাথে সুর মিলানোর
সময় অসময় পাখিদের বন্ধু হওয়ার,
একফোঁটা বৃষ্টির ছোয়ায় সমস্ত দুঃখ ভুলে
প্রকৃতির কন্যা হওয়ার।
কিন্তু হলো না!
রাষ্ট্র আমায় পঙ্গু করেছে,
আমার বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে,
আমার নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে,
আমার পাশের ঝিরির পাথর তুলে নিয়েছে,
আমার পাহাড় কেটে নিয়েছে,
প্রকৃতিকে ধ্বংস করেছে।
এই বিচার চাইবো কোথায়?

পাহাড়ের বুকে যখনি শকুনের নজর পড়েছে,
ঠিক তখনি কোণায় কোণায় প্রকৃতির আর্তনাদ,
কোণায় কোণায়,
আমার বোন চিংমা খেয়াং, লাকিংমে, কৃত্তিকা ত্রিপুরার আর্তনাদ,
ধর্ষণের পর হত্যা তবুও এই রাষ্ট্র এর সুষ্ঠু বিচার পারেনি দিতে।
এর সুষ্ঠু বিচার আদৌ কি পাবো? পাবো না,
রাষ্ট্র এই আর্তনাদ শুনতে পায়নি, শুনবে না।
যতদিন হবে না আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা।

মা বোনের আর্তনাদের আওয়াজ যখনি এসে পৌঁছাল কানে,
বিচার চাইতে গিয়ে ভাইয়ের বুকে যখনি গুলি ছোঁড়ানো হলো,
নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি যখনি পুড়িয়ে দেওয়া হলো,
ঠিক তখনি সৃষ্ট ক্ষোভ আগুনের শিখার মতোই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো,
তখনি শক্তি, সাহস দ্বিগুণে রুপান্তরিত হলো।

More From Author