এম এন লারমার প্রগতিশীল ভাবনা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

ধীর কুমার চাকমা

১০ নভেম্বর ২০২৫ খ্রী: মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। আজ থেকে ৪২ বছর আগে এই দিনে তাঁর আট সহযোগীসহ বিভেদপন্থীদের বিশ্বাসঘাতকতামূলক আক্রমণে শহীদ হন। এম এন লারমাসহ সকল বীর শহীদদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি। মানব সভ্যতা বিকাশে প্রগতিশীল চিন্তাধারার ভূমিকা অপরিসীম। মহান নেতা এম এন লারমা ছিলেন সেই চিন্তাধারার ধারক-বাহক। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সেই চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন মহান নেতা এম এন লারমা। তাই এম এন লারমা প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তিনি ১৯৫৬ সাল থেকে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ করেন। তারপরের বছর ১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম পাহাড়ী ছাত্র সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ছাত্র জীবনে কিছু একটা বুঝে উঠার পর থেকেই ভারত উপমহাদেশ তথা বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। শৈশবকাল থেকে তাঁর বাবা (মহাপুরম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক) চিত্তকিশোর চাকমার সংগৃহীত যুগোপযোগী পত্রিকার পাতা ঘেঁটেছেন। ক্রমান্বয়ে যুগ যুগ ধরে অধিকার বঞ্চিত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্মদের মুক্তির জন্য চিন্তাভাবনা তাঁকে পেয়ে বসেছিল। ১৯৬১ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিতকরণের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এম এন লারমা।

জীবদ্দশায় মহান নেতা এম এন লারমা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীতে কেউ কারোর ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় না। তাই তিনি হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। সরকারের দেয়া রাজধানীর বহুতল বিশিষ্ট অট্টালিকা ও মন্ত্রীত্বের লোভ তাকে মোহিত করতে পারেনি। তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল সহায় সম্বলহীন জুম্মদের পাশে স্কুল শিক্ষক জীবন। তাই জেল থেকে ১৯৬৫ সালে বিএ পাশ করার পর, বেরিয়ে পড়েছেন শিক্ষক বেশে আন্দোলনের বন্ধু সন্ধানে। গিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে, অশিক্ষা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হতদরিদ্র জুম্মদের দ্বারে দ্বারে। জেনে নিয়েছেন তাদের দুঃখ জর্জড়িত জীবনের কথা। তাদের মনে সাহস যুগিয়েছেন, আশ্বস্থ করেছেন। দিয়েছেন দুর্বিসহ জীবন থেকে মুক্তির দিশা। তিনি অনুভব করেছেন শিক্ষাই পশ্চাদপদ সমাজের সকল সমস্যা সমাধানের মোক্ষম হাতিয়ার। একজন শিক্ষক হিসেবে সমাজে মেলামেশা করার মতো জনসংযোগের সুযোগ অন্য কোথাও নেই।

১৯৬৯-৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের উত্তাল গণআন্দোলনের জোয়ার অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে আন্দোলিত করেছিল। মহান নেতা এম এন লারমা (ওরফে মঞ্জু বাবু) ১৯৬৬ সালে এবং জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (ওরফে সন্তু লারমা), তার পরে মাইনী, দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ছাত্রদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে (মঞ্জু বাবু ও সন্তু বাবু) উভয়ে শুধু স্কুলের পাঠদানের মধ্যে তাদের নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি। শ্রদ্ধেয় সন্তু বাবু, রাত্রে চুপিসারে ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রদের পড়াশুনার তদারকী করতেন। শ্রদ্ধেয় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (মঞ্জু বাবু) দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে তিনি তার পৌরবিজ্ঞান পেড়িয়ডের অধিকাংশ সময় জুড়ে রাষ্ট্র গঠন এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ছাত্রদের বুঝিয়ে বলতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সামন্ত সমাজের কথা তথা সরকারের শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থান্বেষী মহলের সমালোচনা করে ক্লাশের ছাত্রদের পড়াতেন।

স্কুল চলাকালীন সময়ে স্কুল কতৃর্পক্ষের পূর্বানুমোদন ছাড়া সরকারী প্রশাসনের লোকজন স্কুল সীমানার মধ্যে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারী থাকতো স্কুল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কারণ তখন স্কুলের দেওয়াল ঘেঁষে, সময়ে-অসময়ে স্কুল বাউন্ডারিতে ঢুকে, পূর্ব-পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন স্কুলে নজরদারী করতো। পাহাড়ী ছাত্র সমিতির মিটিং শুনতো। অপরদিকে পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে ছাত্র সমিতির মিছিল, সভা, সমাবেশ করতে দিতো না সাধারণ প্রশাসন। সর্বোপরি ছাত্র সমিতির কার্যক্রম তথা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এবং জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)’র গতিবিধির উপর তীক্ষ্ন নজরদারী করাই হলো তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্য। এমতাবস্থায় ছাত্রদের অধিকার সচেতন করতেন এবং ছাত্রদের মহান রাজনৈতিক অঙ্গণে বিচরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতেন অগ্রজ-অনুজ লারমা ভ্রাতৃদ্বয়।

আমরা মহান নেতাকে কাছে থেকে দেখেছি। তিনি সর্বদা সদালাপী ছিলেন। বিনয় আচরন করতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনি হচ্ছেন একজন নিরহঙ্কারী শিক্ষক, এ্যাডভোকেট, রাজনীতিক ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদ এবং মেহনতি মানুষের বন্ধু। আসুন, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এপর্যায়ে দলমত নির্বিশেষে সবাই এম এন লারমার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই, সামনে এগিয়ে যাই! আমরা অধিকারহীন জাতি। জুম্ম জাতি ১০ নভেম্বর ১৯৮৩’র পুনরাবৃত্তি চায় না। তাই ‘এগত্তর’ আওয়াজ শুনলে সহজ-সরল, শান্তিপ্রিয় এবং অধিকারকামী জুম্ম জাতি সরবে উল্লাসিত হয়। আসুন, চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে মহান নেতা এম এন লারমার নীতি-আদের্শের আলোকে জুম্ম জাতীয় ঐক্যকে আরো শক্তিশালী করি।

মহান নেতা এম এন লারমা পার্টির সাংগঠনিক নীতি-কৌশল আন্তরিকভাবে মেনে চলতেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ নেতা চারুবিকাশ চাকমা মিথ্যা মামলায় জেল বন্দী হলে তাকে জেলখানা থেকে বেকসুর খালাস করে আনেন এডভোকেট এম এন লারমা। অথচ সেই চারু বিকাশ চাকামাই এম এন লারমার উদ্দেশ্যে প্রথম কটুি্ক্ত করেছিলেন এই বলে যে, “লারমা কী আজব স্বপ্ন দেখেন! আজব কথা বলেন! চেঙ্গী, মেয়নী ও কাসলং এর আগায় গিয়ে (সাড়ে সাত লাখ) বাঙালি মূত্রত্যাগ করে দিলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জুম্ম ভেসে যাবে। তখন লারমার ঘোষিত স্বায়ত্তশাসনের জন্য কে আন্দোলন করবে!” শেষ অব্দি কর্ণফূলী লেকের জলে (সুবলং-এ) ভাসমান বাঁশের ভেলা থেকে গ্রেফতার ও জেল বন্দী (বাঁশ ব্যবসায়ী) চারু বিকাশ চাকমাকে কারামুক্ত করেন এ্যাডভোকেট এম এন লারমাই। বৃটিশ আমলের যে ধারা বলে চারুবাবুকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, সেই ধারা বাংলাদেশ আমলে ইতিমধ্যে রদ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা রাঙ্গামাটির তৎকালীন ডিসি মহোদয়ের মাথায় ছিল না। তাই এম এন লারমার একটি জেরায় ডিসি মহোদয় কুপোকাত হয়ে চারু বাবুকে বেকসুর খালাস দিতে বাধ্য হন। চারুবাবু চলে গেছেন, মহান নেতা এম এন লারমাও। কিন্তু আপামর জুম্ম জনতা আজো এম এন লারমাকে ভুলেনি। ভুলেনি তাঁর প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা ও নীতি-আদর্শ। জুম্ম জনতা আজো আগলে রেখেছে মহান নেতার গড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং সমিতির নেতা ও নেতৃত্বকে।

সময়টা ছিল ১৯৭২ সাল। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরপরই হঠাৎ করে দূরন্ত কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ায় পতাকা-বাঁশটি (পতাকা বাঁধা অংশটা) ভেঙ্গে পড়ে। এমতাবস্থায় পতাকা মাটিতে না পড়তেই ধরাধরি করে পুনরায় উত্তোলিত হয়। তারপরও এই অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে, গোয়েন্দা রিপোর্ট মূলে শ্রদ্ধেয় সন্তু লারমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা রজ্জু হলো সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের আদালতে। তারপর ১৯৭৪ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ইস্তফা দিয়ে শ্রদ্ধেয় সন্তু লারমা চলে গেলেন গেরিলা জীবনে। তার পদাঙ্ক অনুসরন করেছিলেন পাহাড়ী ছাত্র সমিতির অনেক নেতাকর্মীরা। তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ সশস্ত্র আন্দোলনের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় পদে আসীন হয়েছিলেন। পার্টি সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেদিন গুরুশিষ্য দু’জনে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছি। গেরিলা জীবনে গিয়ে গড়েছি পার্টি জেনারেল হেডকোয়ার্টার। ১৯৭৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে শ্রদ্ধেয় সন্তু লারমা গ্রেফতার হন। তার অব্যবহিত পরেই, মহান নেতা এম এন লারমা পার্টি হেডকোয়ার্টারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণের উদ্যোগ নেয়। মুক্তিবাহিনীতে ট্রেনিং নিতে যায়। কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতার অসহযোগিতার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ থেকে জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজ বাদ পড়ে যায়। কিন্তু জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পাকিস্তানের আমলে পুলিশ, ইপিআর বিভিন্ন ফৌজি বিভাগে কর্মরত জুম্মরা মুক্তিবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেয়। অপরদিকে সীমান্ত অঞ্চলের আদিবাসী জুম্মরা মুক্তিবাহিনীকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি দেশের অন্যসব রজনৈতিক দল থেকে ভিন্নতর বৈশিষ্ট্য সম্বলিত! একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ছাড়া দেশের অন্য কোন জাতীয় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে জুম্মদের অস্তিত্ব সংরক্ষণের কথা উল্লেখ নেই। এমনকি আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে সরকারীভাবে নিবন্ধিত করা হয়নি। ১৯৭৩ সালে এম এন লারমা স্বতন্ত্রভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন।

ষাট দশকের পাহাড়ী ছাত্র সমিতির নেতা-কমীর্রা আন্দোলনের শুরুতে জীবনের অনেক রঙিন স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পতাকাতলে সামিল করেছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্নভাষী ১৪টি জুম্ম জাতিসমূহের জনগণকে। তখন অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছিল সামন্তবাদের ভরা যৌবনকাল। ছিল তিন সার্কেলে তিন রাজার শাসন। সেই পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন আর নেই। নেই রাজাদের স্বাধীন রাজত্বকাল। আজ তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী জুম্ম জাতিসমূহ সবাই ইসলামিক সম্প্রসারণবাদের সাধারণ আক্রমণের লক্ষ্য বস্তু। সেদিন যেই শিশুর জন্ম হয়েছিল আজ গণতান্ত্রিক যুগে, সেই শিশু বার্ধক্যের দ্বার প্রান্তে এসেও জুম্মদের জাতীয় জীবন নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় রয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানের স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর মহান নেতা এম এম এন লারমার সংসদীয় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। শুরু হয় রক্ত পিচ্ছিল গেরিলা জীবনের পথ চলা। পার্বত্য চুক্তিত্তোরকালেও সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদেরকে পুনরায় সেই কঠিন জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। বিভেদপন্থীদের বিশ্বাসঘাতকতামূলক আক্রমণে ’৮৩ সালের ১০ নভেম্বরে মহান নেতার শাহদাত বরণ জুম্ম জাতীয় জীবনে একটি কালো দিবসের জন্ম দিয়েছিল। ১০ নভেম্বরের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে অনাকাঙ্খিত গৃহযুদ্ধ ডিঙিয়ে জুম্ম জনগণ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তিকে সানন্দে বরণ করে নিয়েছে। সেদিন তারাা কালো পতাকা এবং চুক্তি বিরোধী শ্লোগান কখনো মেনে নিতে পারেনি। ’৮৩ সালেও তারা মহান নেতার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেনি। জুম্ম জনগণ হচ্ছে সবচেয়ে সত্য, ন্যায় এবং মানবতার প্রতীক।

আর যাই হোক ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দেড় যুগাধিক কালের সামরিক শাসনের অবসান হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের অবসান হয়নি। তারপরও ১৯৮৫ সালের ২১ অক্টোবরে শুরু হওয়া সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার চলমান সংলাপ অব্যাহত থাকে। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয় বিভিন্ন সরকারের সাথে ২৬ বার বৈঠকের পর। কিন্তু চুক্তিত্তোরকালে রীতিমতো সব সরকারের সাথে চুক্তি বাস্তবায়নের বৈঠক হলেও চুক্তির মূল ধারাগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন আজ ২৮ বছরে পদার্পণ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। হয়তো সেদিন আর বেশী দূরে নয়। যেদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে আন্দোলনের এক পর্যায়ে মুক্তাকাশে উড়বে বিজয়ের পতাকা। সেই দিনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের অনাগত প্রজন্মকে আপোষহীন সংগ্রাম করে যেতে হবে।

 

More From Author