আইএলও’র ৩টি কনভেশনে অনুস্বাক্ষর করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে কৃষিজীবী ও আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিতে উক্ত কনভেনশনের ১৪১ ও ১৬৯ অনুস্বাক্ষরের আহ্বান

হিল ভয়েস, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ঢাকা: মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক অধিকার কর্মীসহ দেশের ২৭ জন নাগরিক গত ২২ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখ জাতিসংঘের আইএলও কনভেশন স্বাক্ষর করায় অন্তরবর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে আই এল ও কনভেনশন ১৪১ ও আইএলও কনভেশন ১৬৯ দ্রুত স্বাক্ষর করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, “গত ২২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ সরকার আইএলও কনভেনশন (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কনভেনশন, ১৯৮১) (নম্বর-১৫৫), আইএলও কনভেশন (কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মান উন্নয়নে প্রচারণামূলক কাঠামো কনভেশন, ২০০৬) (নম্বর-১৮৭) এবং আইএলও কনভেশন (কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়ারানি প্রতিরোধ বিষয়ক কনভেনশন, ২০১৯) (নম্বর-১৯০) অনুস্বাক্ষর করেছে। ইতোপূর্বে এই সরকার ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতন বিরোধী সনদেও অনুস্বাক্ষর করেছেন। আমরা এ কনভেশনগুলোতে অনুস্বাক্ষর করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি এই কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা পালনে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যা বিশেষভাবে শ্রমিকদের এবং সমগ্র জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর পাশাপাশি শ্রম আইন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পথকে সুগম করবে।

তবে বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৪৪ ভাগ কৃষি কাজে নিয়োজিত। কৃষিতে যারা দিন রাত শ্রম দেন, মেধা ও সৃজনশীলতা দিয়ে একে যুগের পর যুগ বাঁচিয়ে রেখেছেন, সমৃদ্ধ করে চলেছেন তারাই সবচেয়ে অবহেলিত, উপেক্ষিত। আমরা কৃষি এবং কৃষিজাত সকল পণ্যের প্রসার, উন্নয়ন এবং কৃষিজীবি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর (নারী কৃষক সহ) ভাগ্য উন্নয়নের অতি জরুরি এবং অপরিহার্য হিসেবে আইএলও কনভেনশন- ১৪১ (গ্রামীণ শ্রমজীবি কৃষকদের সংগঠন করার অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা বিষয়ক) অনুস্বাক্ষর করা প্রয়োজন মনে করি। যা তাদের প্রাপ্য অধিকারকে সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

এছাড়া বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইএলও কনভেনশন ১৬৯ (আদিবাসী ও উপজাতি জনগণের কনভেশন)টি অনুস্বাক্ষর করাও অতীব জরুরী। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীরা ঐতিহাসিকভাবে সব থেকে বেশি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবহেলা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। আমরা আশা করি, বৈষম্য বিলোপের যে অঙ্গীকার নিয়ে এই অন্তরবর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে তার অংশ হিসেবে কৃষিজীবী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকল্পে এই দুটি কনভেশনে দ্রুত অনুস্বাক্ষর করার পদক্ষেপ এখনই নেয়া হবে। পাশাপাশি এই কনভেনশনে যে সকল অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বাধ্যবাধতা রয়েছে তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।”

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন—
১। আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ২. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন; ৩. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি; ৪. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; ৫. এড. জেড. আই. খান পান্না, চেয়ারপার্সন, আইন ও সালিস কেন্দ্র ও সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৬. শিরীন পারভীন হক, সদস্য, নারী পক্ষ; ৭. শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; ৮. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি; ৯. ড. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১০. পাভেল পার্থ, লেখক ও গবেষক; ১১. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ১২. এড. তবারক হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ১৩. অ্যাডভোকেট তাসলিমা ইসলাম, প্রধান নির্বাহী, বেলা; ১৪. তাসনীম সিরাজ মাহমুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১৫. ড. জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১৬. ড. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ১৭. ড. খাইরুল চৌধুরী, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ১৮. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; ১৯. পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন; ২০. শাহ-ই-মবিন জিন্নাহ, নির্বাহী পরিচালক, সিডিএ; ২১. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট; ২২. মনিন্দ্র কুমার নাথ,ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; ২৩. অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন; ২৪. দীপায়ন খীসা, মানবাধিকার কর্মী; ২৫. সাঈদ আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী; ২৬. হানা শামস আহমেদ, গবেষক ও আদিবাসী অধিকার কর্মী; ২৭. মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রুপ মেম্বার, সাঙ্গাত।

More From Author

+ There are no comments

Add yours