হিল ভয়েস, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) ছিল মারমা স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং সকল ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। সকালের দিকে বড় ধরনের কোনো সংঘাত বা হামলার কথা জানা যায়নি।
তবে সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের নারানখাইয়্যা এলাকায় অবরোধকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার সাথে সেটেলার বাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা প্রায় বিকাল ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, খাগড়াছড়ি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা প্রকাশ করে দুপুর ২টা হতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারির আদেশ দেন। বিকাল ৩টায় জেলার গুইমারা থানায়ও ১৪৪ ধারা জারির আদেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু উক্ত আদেশ জারির কয়েক ঘন্টা পরেই সেটেলার বাঙালিদের কর্তৃক সংঘবদ্ধভাবে জুম্মদের বিভিন্ন এলাকায় হামলা শুরু করে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অন্তত ৩ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

আহত ব্যক্তিরা হলেন-(১) রিকন চাকমা ওরফে বারিজে (২৯), পীং-ভাক্তা চাকমা, ঠিকানা-রাণীপাড়া, বড়াদম, দীঘিনালা উপজেলা; (২) কুমিয়া ত্রিপুরা (২৫), ঠিকানা-আমতলী, কমলছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এবং (৩) কংসাই মারমা ওরফে মংসাঅং (২২), ঠিকানা-আমতলী, কমলছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা।
সেটেলার বাঙালি দ্বারা জুম্মদের উপর হামলায় আহতদের মধ্যে অধিকতর গুরুতর আহত অবস্থায় রিকন চাকমাকে খাগড়াছড়ি পার্কসাইড হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রিকন চাকমা পেশায় একজন পিক-আপ ড্রাইভার। খাগড়াছড়ি হাসপাতালে তার মাথায় ১৭টি সেলাই হয়েছে বলে জানা যায়। তিনি নারানখাইয়্যা এলাকায় সেটেলার বাঙালিদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন।
জানা গেছে, দুপুর ২টায় ১৪৪ ধারা জারির পর, বিকাল ৪টার দিকে সেটেলার বাঙালিদের একটি দল খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়ায় ধারালো অস্ত্র এবং কান্তা ও ধাতব গুলি নিয়ে হামলা চালায়। এসময় সেটেলার বাঙালি ও মহাজন পাড়ার ছাত্র-জনতার মধ্যে কয়েক ঘন্টা যাবৎ ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া চলে। এসময় সেটেলার বাঙালিরা নিজেরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে, পরে তারা জুম্মরা হামলা ও ভাঙচুর চালায় বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালায়।
এছাড়া বিদেশি অর্থায়নে নির্মাণাধীন উপজেলা মসজিদের গম্বুজ ও ছাদ থেকে একদল সেটেলার বাঙালি জুম্মদের উপর ইটপাটকেল ও গুলতি ছোঁড়ে। এসময় তারা গুলতির গুলি হিসেবে সীসা ও পরিত্যক্ত বন্দুকের গুলিও ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, সেটেলাররা নিজেরাই মসজিদের কিছু গ্লাস ভেঙে পরে জুম্মরা ভেঙে দিয়েছে বলেও অপপ্রচার চালায় বলে জানা যায়।
১৪৪ ধারা জারির মধ্যেও রাত ৭টার দিকে সেটেলার বাঙালিদের আরো দুটি দল সংঘবদ্ধ হয়ে পরপর জুম্ম অধ্যুষিত গঞ্জপাড়া গ্রাম এবং খাগড়াছড়ি বাজার এলাকার য়ংড বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন এলাকায় জুম্মদের উপর হামলা চালায়।
এসময় সেটেলার বাঙালিদের ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটার আঘাতে য়ংড বৌদ্ধ বিহার এলাকায় কুমিয়া ত্রিপুরা ও কংসাই মারমা ওরফে মংসাঅং মারমা গুরুতর আহত হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
রাত ৮টার দিকে জানা যায়, সেটেলার বাঙালিদের আরেকটি দল খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদরদপ্তরের পাশে অবস্থান নিয়েছেন।
এছাড়া স্টেডিয়ামের পাশে সেনাবাহিনী একটি নতুন চেকপোস্ট বসিয়েছে এবং কিছু বাংকার খনন করেছে বলে জানা গেছে।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি অত্যন্ত থমথমে অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
+ There are no comments
Add yours