হিল ভয়েস, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চারটি আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট স্পেশ্যাল র্যাপোর্টিউরদের নিকট ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। অধিকার গ্রুপগুলি হল- মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ (এমআরজি), ইন্টারন্যাশনাল চিটাগং হিলট্র্যাক্টস কমিশন (সিএইচটিসি), ফিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স (ইবগিয়া)।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৬০তম অধিবেশন চলাকালে ‘আইটেম ৩: জেনারেল ডিবেট’ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের সময় উক্ত চার আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠনের পক্ষে স্টেফানিয়া ক্যারার এই দাবি জানান।
স্টেফানিয়া ক্যারার তার বক্তব্যে বলেন, আদিবাসী অধিকার বিষয়ক স্পেশ্যাল র্যাপোর্টিউর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন কাউন্সিলের নিকট উপস্থাপন করছেন। আমরা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠী কর্তৃক সম্মুখীন ধারাবাহিক ও দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্যের প্রতি জরুরি মনোযোগ আকর্ষণ করছি। দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে একের পর এক সরকারসমূহ আদিবাসী সম্প্রদায়সমূহকে সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালি-মুসলিম পরিচিতির সাথে জোরপূর্বক অন্তর্ভুক্ত করার নীতিমালাকে অনুসরণ করে আসছে।
এর মধ্যে রয়েছে, সাংবিধানিকভাবে একক বাঙালি জাতীয়তার পরিচয়কে চাপিয়ে দেওয়া, আদিবাসীদের মর্যাদার অস্বীকৃতি, এবং আদিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ব্যবস্থা অবদমন। রাষ্ট্র অব্যাহতভাবে আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের অধিকারকে অস্বীকার করে ‘আদিবাসী’ অভিধা ব্যবহারে বাধা প্রদান করছে।
সেনাসমর্থিত বসতিদান কর্মসূচির দ্বারা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, যা আদিবাসী সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত করেছে। স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতীত সামরিকায়ন, পর্যটন ও ধর্মীয় অবকাঠামোর কারণে আদিবাসীদের দখল করা হচ্ছে, যার ফলে তাদের খাদ্যের অধিকার সহ তাদের মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। এই ভূমি বেদখলের সাথে রয়েছে বাঙালি-ইসলামিক নাম দিয়ে গ্রাম ও স্থানসমূহের নতুন নামকরণ সহ সাংস্কৃতিক উচ্ছেদ।
এছাড়া শিক্ষা ও কল্যাণের ছদ্মবেশে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত ও দরিদ্র এলাকাসমূহে আদিবাসী শিশুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তর করার ভয়াবহ রিপোর্ট রয়েছে।
আদিবাসীদের স্বায়ত্তশাসন ও তাদের অধিকারের অঙ্গীকার দিয়ে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও চুক্তিটি অধিকাংশই অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।
পরিশেষে, উক্ত চার সংগঠনের পক্ষে স্টেফানিয়া ক্যারার পার্বত্য চুক্তিটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানাতে মানবাধিকার পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট স্পেশ্যাল র্যাপোর্টিউরদের নিকট দাবি জানান।