হিল ভয়েস, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, চট্টগ্রাম: মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬তম জন্মবর্ষ উদযাপন পরিষদ”র উদ্যোগে গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার বিকল ৩:০০ ঘটিকায় হোটেল এশিয়ান, স্টেশন রোড, চট্টগ্রামে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া, ঔক্য ন্যাপ-চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ,খ্রীস্টান ঔক্য পরিষদ এর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক এড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ)-চট্টগ্রামের ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা’র কাঞ্চন ত্রিপুরা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম’র সভাপতি জগৎ জ্যোতি চাকমা, পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লামিও মারমা প্রমুখ।
জগৎজ্যোতি চাকমা বলেন, লারমা একটি আদর্শ। যে আদর্শের ভিত্তিতে জুম্ম জনগণের মাঝে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যা এখনো চলমান। ১৯৯৭ সালের চুক্তি পরবর্তী সরকার চুক্তি নিয়ে টালবাহানা চালিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুর প্রতি ভীত না হয়ে হয়ে আপামর জুম্ম জনগণ চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রামে এখনো অটল।
আল কাদেরী জয় বলেন, শাসকশ্রেণী শাসন-শোষণ জিইয়ে রাখতে চায় বলেই আদিবাসী স্বীকৃতি এবং চুক্তি নিয়ে এত টালবাহানা। এম এন লারমার চিন্তা ও আদর্শের অনুসরণের মাধ্যমেই ভবিষ্যত প্রজন্ম একটি শাসন, শোষণ এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী বলেন, এম এন লারমা যদি তখনকার সময়ে পাহাড়ের জুম্ম জনগণের শিক্ষা-দীক্ষা এবং অধিকার সচেতনতা সঞ্চারের কাজ না করতেন তাহলে জুম্ম জনগণ অনেক পিছিয়ে যেতো। জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্তু পাহাড়ি জুম্মদের স্বার্থে এম এন লারমা কাজ করে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়।
অজিত দাশ বলেন, এম এন লারমা শোষিত, নিপীড়িত ও মেহনতি মানুষদের জন্য যে লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন তা আমাদের স্মরণ করতে হবে, তাঁর বিপ্লবী চেতনা অনুসরণ করে আমাদের ধারণ করতে হবে এবং তাঁর বিপ্লবী আদর্শ ধারণের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম বেগবান হবে।
নুরুচ্ছফা ভূঁইয়া বলেন, পূঁজিবাদী সমাজ নিপীড়ন, শোষণ, বৈষম্য, ধর্ম ইত্যাদিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। পূঁজিবাদী শ্রেণিবিভক্ত সমাজে জাতীয় মুক্তি ছিনিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন এম এন লারমার আদর্শ, দর্শন অধ্যয়ন এবং প্রয়োগের মাধ্যমে জুম্ম জাতির ঐক্যবদ্ধ সমন্বয় ।
হ্লামিও মারমা বলেন, পাকিস্তানি শাসনামলে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ এবং স্বাধীনতা বাংলাদেশ পরবর্তী চাপিয়ে দেওয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং সংবিধানে বহুত্ববাদ অস্বীকারের প্রতিবাদে এম এন লারমা ছিলেন এক প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।
তিনি আরও বলেন, তিনি শুধু জুম্ম জনগণের নেতাই নন, তিনি সকল নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, অধিকারহারা, খেটে খাওয়া মানুষের মহান নেতা।
কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, আমরা একটি শ্রেণিবিভক্ত সমাজে বসবাস করি। এম এন লারমাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে আজ শ্রেণিবিভক্ত সমাজ এক হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও তিনি আগামী দিনে আদিবাসী সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান ব্যক্ত করেন।
তাপস হোড় বলেন, এম এন লারমার সংগ্রাম এবং পথ চলা অবশ্যই আমাদের অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতা পরবর্তী কোনো সরকারই এদেশের বহুত্ববাদকে স্বীকার করতে চায় নি, যা প্রতারণার সামিল । তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার, নিরাপত্তা এবং অস্তিত্বের স্বার্থে সচেতন হওয়া এবং নিজস্ব পদ্ধতিতে আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজন।
পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্কুল ও পাঠাগার সম্পাদক অপূর্ব চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ৮৬তম জন্মবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক তাপস হোড়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আশুতোষ তঞ্চঙ্গ্যা এবং এম এন লারমার জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন সুকর্ণা চাকমা।