গুয়াহাটিতে চাকমা কালো দিবস পালিত

হিল ভয়েস, ১৭ আগস্ট ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ (১৭ আগস্ট) সমগ্র আসাম চাকমা সোসাইটি এবং গুয়াহাটি চাকমা স্টুডেন্টস ইউনিয়নের উদ্যোগে গুয়াহাটির ধম্ম রাজিকা বুদ্ধ বিহারে চাকমা কালো দিবস পালন করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্ট চাকমা জনগোষ্ঠী তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা ও শোকের দিন হিসেবে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমগ্র আসাম চাকমা সোসাইটির সভাপতি দাঙ্গু আশুতোষ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক দাঙ্গু ললিত চাকমা এবং গুয়াহাটি চাকমা স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি দাঙ্গু বুদ্ধ বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা ও দাঙ্গু অহিংসক চাকমা।

বক্তারা তরুণ প্রজন্ম এবং যারা ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্টের ঘটনাবলী সম্পর্কে অবগত নন তাদের কাছে এই কালো দিবসটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তাঁরা শিক্ষার্থী ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতি এই ইতিহাস প্রচারের আহ্বান জানান। বিশেষ করে তাঁরা উল্লেখ করেন, ভারতে বসবাসরত চাকমাদের ভুলভাবে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দেওয়া হয়, অথচ তারা দেশভাগের বহু আগে থেকেই এবং আজও ভারতকে বিশ্বস্তভাবে সমর্থন করে আসছেন।

স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, দেশভাগের আগেই ভারতে চাকমা গ্রাম ছিল এবং ভারতে বসবাসরত চাকমারা কোনোভাবেই বাংলাদেশি নন।

 

নেতারা স্মৃতিচারণ করেন যে, কীভাবে বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন এবং ভারতের নেতারা যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও মহাত্মা গান্ধীও দেশভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেননি, যদিও তখন এ অঞ্চলটির ৯৮.৫% মানুষ ছিলেন বৌদ্ধ ও অমুসলিম। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট চাকমারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিলেন যে, তারা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবেন, তাই রাঙ্গামাটি ডেপুটি কমিশনার কার্যালয়ে গর্বের সঙ্গে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু মাত্র দুই দিন পর, ১৭ আগস্ট ১৯৪৭-এর রেডিও ঘোষণায় তাঁদের আশা ভেঙে চুরমার হয়, যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এই সিদ্ধান্ত শুধু চাকমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাই করেনি, বরং এর মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল কয়েক দশকব্যাপী হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং আদিবাসী জনগণের উপর নির্যাতনের ভয়াবহ অধ্যায়, যা আজও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

অনুষ্ঠানে গুয়াহাটির চাকমা সমাজ অঙ্গীকার করেন যে, তারা দেশপ্রেমমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন, নিজেদের সমাজ রক্ষা করবেন, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সংরক্ষণ করবেন এবং পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য অটুট রাখবেন।

More From Author

+ There are no comments

Add yours