হিল ভয়েস, ২ আগষ্ট ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন এনজিও, ব্যক্তি ও ফেইক সংগঠনের নামে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের নিকট জেএসএসের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, সাজানো ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এতে করে ত্রিপুরার চাকমাদের সম্পর্কে জনমনে একটা ভুল ধারণা জন্মলাভ করছে এবং ত্রিপুরার চাকমা সমাজের মধ্যে একধরনের বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের এসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের মধ্যে সর্বশেষ ঘটনা হলো গত ৩০ জুলাই ২০২৫ ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী জেলার অমরপুর মহকুমার নতুন বাজারে পরানধন চাকমা ও কার্তিক চাকমার নেতৃত্বে ৪০/৪৫ জন চাকমা কর্তৃক জেএসএসের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগ এনে এক বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা এবং অমরপুর মহকুমা শাসক-এর বরাবরে এক স্মারকলিপি প্রদান করা।
উক্ত স্মারকলিপিতে জেএসএসের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তরুণদের জীবন নষ্ট করা, বাংলাদেশে খুন করার পর ভারতকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করা এবং ত্রিপুরা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট (টিইউএনএফ) গঠন করে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে (সিএইচটি) আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালানো ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, কল্পনাপ্রসূত ও ভিত্তিহীন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
যেমন গত ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে আসাম রাইফেলস কর্তৃক মিজোরামের লুংলেই জেলায় ১০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্যসহ দুই চাকমা যুবককে গ্রেফতারের ঘটনায়ও জেএসএস জড়িত বলে মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রচারণা চালানো হয়। অথচ আটককৃত দুই চাকমা যুবক হলো মিজোরামের স্থানীয় বাসিন্দা। তারা কোনক্রমেই জেএসএসের সাথে যুক্ত ছিল না। নিজেদেরকে জেএসএসের সহযোগী বলেও তারা জবানবন্দী দেয়নি। এভাবে ত্রিপুরায় সংঘটিত আরো চারটি মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতারের ঘটনার সাথে জেএসএস’কে মিথ্যাভাবে জড়িত করে উক্ত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। এভাবে ইউপিডিএফ ভারতের বিভিন্ন এনজিও, ব্যক্তি ও ফেইক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে জেএসএসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করে চলেছে এবং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও নিউজপোর্টালে সংবাদ প্রচার করে চলেছে।
বিশ্বস্থসূত্রে জানা যায় যে, গত ৩০শে জুলাই নতুনবাজারে আয়োজিত মিছিলটি আয়োজনের জন্য ইউপিডিএফ (প্রসিত) পরানধন চাকমা ও কার্তিক চাকমাকে ২৫ লক্ষ রুপী প্রদান করে। এই মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য অংশগ্রহণকারীদেরকে জনপ্রতি ১,৫০০ রুপী করে দেয়া হয়। এভাবে সুবিধাবাদীদের দিয়ে ইউপিডিএফ (প্রসিত) জেএসএসের বিরুদ্ধে মিথ্যা অজুহাত এনে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উক্ত মিছিলে কেবলমাত্র লেবাছড়া গ্রাম থেকে ৪০/৪৫ জন চাকমা অংশগ্রহণ করেছে। কোন গাবুজ্যা জধা (ইয়ুথ অর্গানাইজেশন), ছাত্র জধা (ষ্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন) বা চাকমা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেনি। বরঞ্চ এই মিছিলের বিরুদ্ধে গাবুজ্যা জধা, ছাত্র জধা বা সোসাইটির গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। ইউপিডিএফ ও জেএসএসের সংঘাত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়। এটা ত্রিপুরায় টেনে নিয়ে আসা উচিত হয়নি। এভাবেই ইউপিডিএফ অর্থের বিনিময়ে ত্রিপুরার চাকমা সমাজকে বিভক্ত করে চলেছে বলে তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইউপিডিএফ (প্রসিত) বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিকগতভাবে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএসের সাথে পেরে না উঠায় ত্রিপুরা ও মিজোরামে জেএসএসের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে ইউপিডিএফের প্রসিত গ্রুপ। তারই অংশ হিসেবে ‘ত্রিপুরা সচেতন জনজাতি’ নাম ব্যবহার করে গত জুন মাসে ত্রিপুরার কতিপয় জায়গায় পোষ্টারিং ও লিফলেট বিলি করেছে ইউপিডিএফ।
আরো উল্লেখ্য যে, গত ১২ জুলাই ২০২৫ তারিখে গোমতী জেলার যতনবাড়িতে এবং ১৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে উনকোটি জেলার মাছমারাতে গাবুজ্যা জধা (যুব সংগঠন) চাগালা কার্বারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে পৃথক দু’টি সভা আয়োজন করে। এসব সভায় সরাসরি জেএসএসের বিরোধী কোন আলোচনা অনুষ্ঠিত না হলেও ফেসবুকের ফেইক একাউন্ট থেকে জেএসএসের বিরুদ্ধে আলোচনা হয়েছে মর্মে ইউপিডিএফ অপপ্রচার চালায়। এরূপ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ত্রিপুরায় বহুল প্রচারিত ‘জুম্ম টাইমস’-এও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিশেষভাবে চাঞ্চল্যের বিষয় যে, ইউপিডিএফ কর্তৃক এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কোন ঘটনা সংঘটিত করা হলে, তা সাথে সাথে দিল্লীতে বসবাসকারী সুহাস চাকমা তার ফেসবুক ওয়ালে প্রচার করে থাকে। সেসব ঘটনার উপর ফেসবুকে লাইভ সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকে। তাই ইউপিডিএফ কর্তৃক জেএসএসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের ক্ষেত্রে সুহাস চাকমা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। জেএসএস বিরোধী ইউপিডিএফের প্রচারকার্যে এবং ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট জেএসএসের বিরুদ্ধে মিথ্যা, সাজানো ও কাল্পনিক অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে সুহাস চাকমা নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষত্রে তার কায়েমী স্বার্থ জড়িত রয়েছে বলে ত্রিপুরার অনেক চাকমা নেতা উল্লেখ করেন। সেই সাথে ত্রিপুরার কতিপয় সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিপুরার অনেক চাকমা নেতা উল্লেখ করেন যে, জেএসএস বিরোধী ইউপিডিএফের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে সামিল হয়ে সুহাস চাকমা ও সুবিধাবাদী কতিপয় ব্যক্তি ত্রিপুরার চাকমাদেরকে জাতিগতভাবে বাংলাদেশী হিসেবে গণ্য করে চলেছে এবং চাকমা সমাজকে বিভক্ত করে চলেছে। অন্যদিকে জেএসএস নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাতে গিয়ে ভারতের ভাবমূর্তি এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ণ করে চলেছে সুহাস চাকমা ও কায়েমী স্বার্থবাদী ব্যক্তিরা। তাই ইউপিডিএফ ও সুহাস চাকমার এই ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার সম্পর্কে ভারত সরকারকে ও ত্রিপুরার চাকমা সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে এবং গভীরভাবে ভাবতে হবে বলে অনেক চাকমা প্রবীণ ব্যক্তি অভিমত ব্যক্ত করেন।