বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএফের কমান্ডারসহ নিহত ৪

হিল ভয়েস, ৪ জুলাই ২০২৫, বান্দরবান: বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একজন সামরিক কমান্ডারসহ চার জন নিহত হয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দুই জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, গত বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে রুমা জোন থেকে একটি সেনা টহল দল অভিযানের নামে লাইরুনপি পাড়া হয়ে মুয়ালপি পাড়া অভিমুখে রওনা হয়। উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরেই মুয়ালপি পাড়াতে কেএনএফের লালমুন্ট্রিয়াল বমের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র গ্রুপ অবস্থান করছিল।

পাড়াবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ বারবার অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও সেনাবাহিনী ও প্রশাসন থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ২ জুলাই সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হওয়ার আগেই কেএনএফ সদস্যদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয় এবং সেকারণেই কেএনএফ সদস্যরা আগেভাগে মুয়ালপি পাড়া ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।

কিন্তু ঘটনা ঘটে অন্যদিকে। কেএনএফ সদস্যরা চালছড়া ঝিড়ির মাথায় ৩টি জুমঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। অপরদিকে মন্নুয়াম পাড়া থেকে সেনাবাহিনীর একটি টহল দলও সেদিকেই রওনা হয়েছিল এবং সেটি কেএনএফ সদস্যরা জানত না। এমনকি কেএনএফের অবস্থান সম্পর্কে মন্নুয়াম পাড়া ক্যাম্প হতে যাওয়া সেনা দলটিও কোনভাবেই অবগত ছিল না।

সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল রাতের মধ্যেই তারা মুয়ালপি পাড়ায় গিয়ে সেনাবাহিনীর অপর দলটির সাথে মিলিত হওয়া। কিন্তু যখনই সেনাবাহিনী চালছড়া ঝিড়ির মাথায় ঐ জুমচাবে পৌঁছায়, তখনই কেএনএফের সেন্ট্রি সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে।

কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপর্যুপরি পাল্টা ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। যার ফলে ঘটনাস্থলে কেএনএফের ৪ জন সদস্য নিহত হয়। কিন্তু সেনাবাহিনী শুধুমাত্র ২ জনের মৃত্যুর খবর জানায়। বাকি ২ জনকে সেনাবাহিনী কেএনএফের হাতে তুলে দেয়।

নিহত সদস্যরা হলেন- ১. লালরিন অম বম (২৬), পিতা-তোয়ার থাং বম, তার পার্টি নাম- ডলি, স্বঘোষিত মেজর, গ্রাম-রনিন পাড়া, ১নং পাইন্দু ইউপি, রুমা উপজেলা; ২. রোয়াল নোন বম (২০), পিতা-লাল লিয়ান খুম বম, তার পার্টি নাম– আনুন, স্বঘোষিত ওয়ারেন্ট অফিসার, গ্রাম-সুনসং পাড়া, ৩নং রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়ন, রুমা উপজেলা; ৩. লাল হিম সাং বম (২৫), পিতা-মৃত জিরখুম বম, তার পার্টি নাম– আহিম, সৈনিক, গ্রাম-মুননোয়াম পাড়া, ১নং পাইন্দু ইউনিয়ন, রুমা উপজেলা; এবং ৪. সাংমিন বম (২৭), পিতা-ত্লাং ইয়াং বম, তার পার্টি নাম– পুতিন, স্বঘোষিত ক্যাপ্টেন (কেএনএফ চিফ কালেক্টর), গ্রাম-মুয়ালপি পাড়া, ১নং পাইন্দু ইউনিয়ন, রুমা উপজেলা।

উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নাম দিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএফ সৃষ্টি করা হয়। পরে ২০১৯ সালে কেএনডিও নাম পরিবর্তন করে কেএনএফ রাখা হয়। রুমার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেএনএফের ক্যাম্পে ইসলামী জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার খবর প্রচার হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ সরকার কেএনএফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।

More From Author