সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের অপহরণ, হত্যা, চাকরিজীবী ও জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়

0
1095

হিল ভয়েস, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০: সম্প্রতি সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক খাগড়াছড়িতে একজনকে অপহরণ, নান্যাচরে একজনকে গুলি করে হত্যা, বরকলে জুম্ম দোকানদার ও চাকরিজীবীদের কাছ থেকে এবং রাঙ্গামাটির জীবতলীতে জেলেদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা থেকে একজনকে অপহর

খাগড়াছড়ির আলুটিলা রিছাং ঝর্ণা এলাকার একটি দোকান থেকে ফুলেন ত্রিপুরার নেতৃত্বে সেনা মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসী কর্তৃক এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহৃত ব্যক্তির নাম দুল্ল্যে ত্রিপুরা, পিতা নজ কুমার ত্রিপুরা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার বিকালে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে।

বরকল বাজারের জুম্ম দোকানদার ও চাকরিজীবীদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে চাঁদা দায়

গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার বরকল উপজেলার বরকল বাজারের জুম্ম দোকানদারদের কাছ থেকে সংস্কারপন্থী সশস্ত্র গ্রুপের লোকেরা প্রতি  দোকান  থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে দোকারনদাররা প্রতি দোকান থেকে ৫০০ টাকা  করে  তুলে বিকাশে সংস্কারপন্থীদের নিকট পাঠিয়ে দেয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

এছাড়া গত আগস্ট মাসে সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বরকল উপজেলায় জুম্ম চাকরিজীবীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১,৫০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা করে চাঁদা করেছে বলে জানা গেছে। চাঁদা না দিলে বান্দরবানের বাঘমারায় সংঘটিত ৭ খুনের মামলায় জড়িত করা হবে মর্মে হুমকি দিয়ে কোন কোন চাকরিজীবীদের কাছ ২০,০০০ টাকা করেও চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নান্যাচরের কুতুকছড়িতে এক জুম্ম দোকানদারকে সম্পত্তি লুট ও তছনছ

গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সন্ধ্যার দিকে নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শিকল পাড়ার বাসিন্দা সুরেশ কুমার চাকমা (৫৮)-কে ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের সমাজ কল্যাণ যাত্রী ছাউনি পার্শ্বস্থ তার নিজ চায়ের দোকানে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করে। একটি অটোরিক্সা যোগে এসে দুবৃর্ত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

জীবতলীতে দুই পরিবারের সম্পত্তি লুট ও তছনছ

সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে একমাস যাবত এলাকাছাড়া অবস্থায় থাকার পর চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা সমীরণ চাকমা ও প্রকৃতি চাকমা (সোনা মনি)-এর পরিবার সমঝোতার ভিত্তিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বাড়িতে ফিরে আসেন। ফিরে এসে সমীরণ চাকমার স্ত্রী রেফা চাকমা ও প্রকৃতি চাকমা (সোনা মনি)-এর স্ত্রী শান্তনা চাকমা দেখেন, তাদের দুই পরিবারের বাড়ীর আসবাবপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র সন্ত্রাসীরা তছনছ ও লুটপাট করেছে। দুটি পরিবারের ক্ষতির পরিমান অন্তত ৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি হতে পারে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

জীবতলীতে কেজকি জালের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা দায়

গত ১৪ আগস্ট ২০২০ কাপ্তাই সেনাজোন হতে জীবতলী ইউনিয়নের সকল জুম্ম কেজকি জালের জেলেদেরকে সেনাজোনে উপস্হিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। ১৬ জন জেলে সেনা জোনে গেলে সেনা কর্তৃপক্ষ বড় খালে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

অপরদিকে ১৭ আগস্ট ২০২০ সেনা-সমর্থিত ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা জীবতলী ইউনিয়নের সকল জুম্ম কেজকি জালের জেলেদেরকে চেয়ারম্যান পাড়াস্থ তাদের আস্তানায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়। জেলেরা সেখানে দেখা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা প্রত্যেক কেজকি জালের মালিককে বাৎসরিক ৬,০০০ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের মধ্যে উক্ত টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেয়। জেলেদের অনেক আবেদন-নিবেদনের পর অবশেষে সন্ত্রাসীরা জনপ্রতি ৪,০০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

জীবতলী ইউনিয়ন ও মগবান ইউনিয়নের জুম্ম কেজকি জালের মালিক কম করে হলেও দুই শতের অধিক রয়েছে। জীবতলী ইউনিয়নের পানছড়ি পাড়া থেক ১৫ জন, চেয়ারম্যান পাড়া থেকে ২৪ জন, বাকছড়ি পাড়া থেকে ২১ জন, রেংখ্যং বাজার থেকে ৮ জন ও ধুল্যাছড়ি পাড়া থেকে ৮ জন মোট ৭৬ জনের (কেজকি জালের মালিক) নাম পাওয়া গেছে যারা ৪,০০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে বাধ্য হয়েছে। এভাবে ২০০ জন কেজকি জালের মালিক থেকে কমপক্ষে ৮ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।