সেনাবাহিনী কর্তৃক জুরাছড়িতে জুম্মর বাড়ি তল্লাসি ও বালুখালিতে হয়রানির অভিযোগ

0
179
ছবি: প্রতীকী
হিল ভয়েস, ৩ অক্টোবর ২০২২, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলায় জুম্মদের ২টি বাড়ি তল্লাসি এবং রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন বালুখালিতে নিরীহ জুম্মদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২ অক্টোবর ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩০ টার দিকে জুরাছড়ির বনযোগীছড়া সেনা জোনের অধীন যক্ষ্মাবাজার সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার মেজর এহতেশামুল হক এর নেতৃত্বে ৪০/৪৫ জনের সেনাবাহিনীর একটি টহল দল জুরাছড়ি ইউনিয়ন এলাকায় টহল অভিযান চালায়। এসময় সেনা সদস্যরা সন্ত্রাসী খোঁজার নামে জুরাছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মধ্য বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা (১) সত্যপ্রিয় চাকমা (৩৫), পীং-কর্মধন চাকমা ও (২) চিক্কো চাকমা (৪৪), পীং-বিন্দুমনি চাকমা’র বাড়িতে ব্যাপক তল্লাসি চালায় এবং বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। এছাড়া সেনা সদস্যরা বাড়ির নারী-পুরুষদের ‘সন্ত্রাসীরা কোথায় থাকে, এখানে আছে কিনা’ ইত্যাদি নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়রানি করে।
অপরদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ বিকাল আনুমানিক ২:৩০ টার দিকে জুরাছড়ি উপজেলার ২ বীর জুরাছড়ি সেনা জোনের অধীন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মরিচ্যাবিল সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ শাহাদাৎ হোসেন এর নেতৃত্বে ১৪ জনের একটি সেনাদল বালুখালী ইউনিয়ন এলাকায় টহল অভিযান চালায়। এসময় সেনা সদস্যরা কাইন্দ্যা এলাকায় লিটন চাকমার দোকানে এসে অবস্থান করে। এসময় লিটন চাকমা দোকানে ছিল না, তবে লিটনের স্ত্রী মিনতি কার্বারি দোকানে অবস্থান করছিলেন। সেনা সদস্যরা অনুমতি না দিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় অগোচরে মিনতি কার্বারির ফটো তুলে নেয়।
এরপর সেনা সদস্যরা প্রাক্তন ইউপি সদস্য সঞ্চয় চাকমার দোকানে যায়। এসময় ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ শাহাদাৎ হোসেন সঞ্চয় চাকমাকে ‘এই গ্রামে জেএসএস সন্ত্রাসীরা এসেছে কিনা, সন্ত্রাসীদের হাতিয়ারগুলি দেখতে কেমন’ ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করে হয়রানি করে।
এরপর সেনা সদস্যরা সঞ্চয় চাকমার দোকানে বসে থাকা অবস্থায় কাইন্দ্যা পাড়া গ্রামের কার্বারি মহেন্দ্র লাল কার্বারিকে সেখানে ডেকে পাঠায়। মহেন্দ্র লাল কার্বারি সেখানে আসলে সেনা সদস্যরা মোবাইলে তোলা মিনতি কার্বারির ফটোটি দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, সেই মহিলাটিকে চেনেন কিনা। এসময় সেনা সদস্যরা মহেন্দ্র লাল কার্বারিকে বলে মিনতি কার্বারিকে ডেকে আনতে এবং মিনতি কার্বারি যেন সাথে তাদের ল্যান্ড ফোনটি আনে।
মিনতি কার্বারি তাদের নষ্ট হওয়া ল্যান্ড ফোনটি নিয়ে সঞ্চয় চাকমার দোকানে উপস্থিত হয়। সেনা সদস্যরা জানতে চায় ল্যান্ড ফোনটি কিভাবে খারাপ হলো এবং তারা পরীক্ষা করে দেখে যে, ল্যান্ড ফোনটি সত্যি অচল। এসময় ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ শাহাদাৎ হোসেন হয়রানিমূলকভাবে মিনতি কার্বারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, ‘কাকে ফোন করো সত্য কথা বলতে হবে, আমি সব জানি কাকে ফোন করো..’ ইত্যাদি অপ্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্ন।
এরপর সেনা সদস্যরা সঞ্চয় চাকমাকে আরো বলে যে, দোজরী পাড়ায় একটা ব্র্যাক স্কুল আছে। সেই স্কুলের পাশের একটি টিলায় সন্ত্রাসীরা থাকে। তোমরা জানো না কেন? এইভাবে গ্রামের মানুষকে নানা প্রশ্ন করে, বিব্রত করে বসন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত যাপন করে পরদিন ১ অক্টোবর সকাল ৭:০০ টার দিকে সেনাদলটি সেনা ক্যাম্পে ফিরে যায়।