লামায় ভূমিদস্যূ রাবার কোম্পানির পক্ষে সেটেলারদের নাগরিক পরিষদের সড়ক অবরোধ

0
430

হিল ভয়েস, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ভূমি বেদখলকারী কোম্পানি লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজের পক্ষে সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট সেটেলারদের উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে সরই ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার হাসনাপাড়া ও কেয়াজুপাড়া বাজারে সড়ক অবরোধ করে।

ভূমিদস্যূ লামা রাবার ইন্ডাষ্টিজের ভূমি বেদখলের পক্ষে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে নাগরিক পরিষদের এহেন জঘন্য কর্মসূচি এবং এতে করে জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টির বিরুদ্ধে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, আজ শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭:০০ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত লামার সরই ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার হাসনাপাড়া ও কেয়াজুপাড়া বাজারে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যাগে ভূমি উন্নয়ন অধিকার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে অবস্থান নেয় দুই শতাধিক সেটেলার বাঙালি অবস্থান করে।

সেনা-মদদপুষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগিরক পরিষদ প্রচার করে যে, “১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজায় অবস্থিত লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরাদের জমি জবরদখল এবং পাহাড়ি ঝিরিতে কীটনাশক ছিটানোর বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সিএইচটি কমিশনের উদ্যোগে ঢাকা থেকে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীদের একটি প্রতিনিধিদল লামা সফরে আসছেন।”

সুশীল সমাজের উক্ত প্রতিনিধিদলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন সাদেকা হালিম, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস রয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।

আরো প্রচার করা হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে সরই-ডলুছড়ি ভূমি উন্নয়ন অধিকার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের বাধার কারণে বান্দরবানের লামায় ঢুকতে পারেনি সিএইচটি কমিশনের টিম।

সেটেলার নেতৃবৃন্দ সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে দাবি করেন যে, “জেএসএসের নেতৃত্বে উপজাতি সন্ত্রাসীদের মদদপুষ্ট একটি চক্র লামা রাবার কোম্পানির রাবার বাগানের জায়গায় বেআইনিভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠা করছেন। সেই বেআইনি জুলুম কর্মকান্ডকে সমর্থন দিতে সিএইচটি কমিশনের প্রতিনিধিদল সরই এলাকায় সফরে আসছেন।” কেয়াজুপাড়া চৌরাস্তায় কথিত ভূমি অধিকার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মো: নুরু মিয়ার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন আব্দুল গফুর, কালু মেম্বার সহ কতিপয় সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিবর্গ।

কিন্তু সিএইচটি কমিশনের উদ্যোগে ঢাকা থেকে এধরনের কোন নাগরিক প্রতিনিধিদল লামা সরই ইউনিয়নে সফরে আসছেন মর্মে হিল ভয়েসের অনুসন্ধানে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নয়ন বঞ্চিত ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয় আদিবাসীদের উদ্যোগে সরই ইউনিয়নে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ উক্ত স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বস্তুত লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্তৃক সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লাংকম ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা এবং রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়ায় গত ৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ৪০০ একর ভূমি বেদখল ও অগ্নিসংযোগ সংযোগ এবং ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে ম্রো জাতিসত্তার গ্রামবাসীদের মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ম্রোদের খাবার পানির উৎস ঝিরির পানিতে বিষ প্রয়োগ করার লোমহর্ষক ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীনউদ্দেশ্যে সিএইচটি কমিশনের প্রতিনিধিদল লামায় সফরে আসছেন মর্মে কাল্পনিক অজুহাত সৃষ্টি করে সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মদদে এবং লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজের সহায়তায় উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এই সড়ক অবরোধের ডাক দেয়।

এতে করে গাড়ি যাতায়াতে এবং সড়ক পথে চলাচলকারী লোকজনকে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় নাগরিক পরিষদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিক এই ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে সড়ক অবরোধ করার বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ দেয়া দিয়েছে।

এভাবেই আজ সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মদদে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের বিরোধ নিষ্পত্তিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে, এবং পক্ষান্তরে ভূমি জবরদখল, সাম্প্রদায়িক হামলা, জুম্ম নারীর উপর সহিংসতা, বহিরাগত অনুপ্রবেশ ইত্যাদি রাষ্ট্রযন্ত্রের মানবতা-বিরোধী কার্যক্রমের পক্ষে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীর মদদে জন্মলাভের পর থেকেই চালিয়ে আসছে।