রাঙ্গামাটিতে পিসিপির উদ্যোগে ৫% আদিবাসী শিক্ষা কোটাসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে শিক্ষা দিবস পালিত

0
491

হিল ভয়েস, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: শিক্ষা দিবস-২০২২ উপলক্ষে দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% আদিবাসী ভর্তি কোটা নিশ্চিত করাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট নিরসন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মেতাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট দ্রুত হস্তান্তর করার দাবিতে রাঙ্গামাটি ডিসি অফিসের ফটকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পিসিপি’র রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় এবং পিসিপি’র রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি জিকো চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোনারিতা চাকমা, পিসিপি’র রাঙ্গামাটি শহর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেশ চাকমা, পিসিপি’র রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুনীতি বিকাশ চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রনেল চাকমা।

তিনি ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকা হরতালে পুলিশের গুলিতে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা খুবই নাজুক। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে তিনি সরকারকে আহ্বান জানান।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোনারিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা এর শিকার হচ্ছে। সেজন্য সমাজে সুশিক্ষার অভাবে সচেতনতা না থাকায় বাল্যবিবাহ বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ বেড়ে চলেছে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুম্ম জনগণ তাদের শিক্ষার যে মৌলিক অধিকার সেটা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা তার বক্তব্যে বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা ভালো না হলে সঠিকভাবে জাতি গঠন করা যায় না। শিক্ষার মান ভালো না হলে নীতি, নৈতিকতা সুসংগঠিত হয় না। ফলে সমাজে অনাচার দেখা দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা বেশ নাজুক। এখানে প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে শিক্ষকরা যেতে চায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুরবস্থা করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষক মোট ৯ হাজার ৪৪২ পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ৭ হাজার ৮৩৭জন শিক্ষক। সে তুলনায় নিয়োগ দেয়া হয় খুব কম। রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সমমানের। কিন্তু সেখানে কোনো কোনো বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে এক বা দুইজন শিক্ষক দিয়ে। এটা খুব দুঃখজনক। সরকারি কলেজের অবস্থা যদি এরকম হয়, তাহলে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা কেমন হবে সেটা বলার বাইরে।

তিনি আরো বলেন, আগে এখানকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক করেন। যোগ্য শিক্ষকদের সেখানে নিয়োগ দেন। যাতে এখানকার ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে পড়তে পারে। পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ হয় সেদিকে তাগিদ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী শিক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে সরকারকে আহ্বান জানান।

মানববন্ধনে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২০০ ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।

আলোচনার শেষদিকে আলোচনা সভার সভাপতি জিকো চাকমা মানববন্ধনে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করেন:
১. দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% আদিবাসী ভর্তি কোটা নিশ্চিত করতে হবে।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট দ্রুত হস্তান্তর করতে হবে।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল আদিবাসীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত চালু করতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকসহ সকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট নিরসন করতে হবে।
৫. দেশে সার্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু করতে হবে।
৬. প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত জুম্ম ছাত্রছাত্রীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান সরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং আবাসন সংকট নিরসনে প্রয়েজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. পার্বত্য অঞ্চলে সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রাবাস চালু করতে হবে।
৯. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।