মহালছড়িতে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মামলা

0
1478

হিল ভয়েস, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়িতে চার বাঙালি সেটেলার যুবক কর্তৃক এক জুুম্ম স্কুল ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলেও শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের চেষ্টা বলে অভিযোগ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী উক্ত মারমা ছাত্রীর পিতা নিজে বাদী হয়ে ঘটনার সাত দিন পর গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ মহালছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মহালছড়ি থানার মামলা নং-২, তারিখ ০৭-০৯-২০২০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ এর আওতায় ৯(৪) এর (খ) ১০/৩০ ধারা।

মামলায় ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধে আল আমিন (২৭), পিতাঃ আলীম উদ্দিন, গ্রামঃ নতুন পাড়া সহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসীর মতে, মূলত উপযুক্ত শাস্তি থেকে ধর্ষকদের বাঁচাতে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণধর্ষণের ঘটনাটিকে শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের চেষ্টা বলে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও পুলিশকে প্রভাবিত করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ‘হিল ভয়েস’ অনলাইন গণমাধ্যমে মহালছড়িতে চার বাঙালি সেটেলার যুবক কর্তৃক রাতভর অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এক মারমা কিশোরী (১৪) গণধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে, মহালছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রম্যান রতন কুমার শীল এক সালিশ ডেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি মিটমাট ও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এরপর ঘটনার খবরটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।

কিন্তু এরপরও ছয় দিন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেও কোন মতামত প্রদান করা হয়নি।

অবশেষে অনেক বিলম্ব করে ঘটনার সাত দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রীর পিতা মামলা দায়ের করেন। ধারণা করা যায়, একটি প্রভাবশালী মহল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মামলা প্রদানের ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন।

থুইন্য মারমা (Thuinyo Marma) নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ভিকটিম পরিবার মামলা করার জন্য মহালছড়ি থানায় গেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল এর সাঙ্গপাঙ্গরা কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ জন থানা ঘেরাও করে রাখে। হামলা করার উদ্দেশ্যে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘গণধর্ষণ করা হয়েছে মেয়েকে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ মামলা দেয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, বাদীর এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভিকটিম সন্ধ্যা ৭.০৫ টার দিকে রাবার বাগানে পৌঁছলে সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা আল আমিনসহ ৩ জন ভিকটিমকে কেমন আছো বলে মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক নির্জন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভিকটিমের কোমরের বাম পাশে ও বাম হাতের কনুইতে থেতলে যায় এবং কপালের বামপাশ ফুলে যায়। জখমপ্রাপ্ত ভিকটিম এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে সেই দিন রাত্রে ৩ টার দিকে ভিকটিমের জ্ঞান ফিরে আসলে টিলাপাড়াস্থ উহ্লাপ্রুর ক্যায়াং এর সামনে নিজেকে আবিস্কার করে।’

বলাবাহুল্য, মামলায় ঘটনাটিকে ধর্ষণের চেষ্টা বলে অভিহিত করা হলেও এজাহারের উক্ত বিবরণে চার ধর্ষণকারী যুবকের হাতে উক্ত ছাত্রীর অসহায়ত্ব, কয়েক ঘন্টা যাবৎ আটকে থাকা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের পরিণতিকেই তুলে ধরে।