বাঘাইছড়িতে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

0
283

হিল ভয়েস, ৮ নভেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮৮টি পরিবারসমূহের ক্ষতিপূরণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

আজ মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকালে বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের উগলছড়ি আর্যপুর গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য রাশিকা চাকমা।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান প্রিয় বিকাশ চাকমা, সারোয়াতলী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সুগত চাকমা, সারোয়াতলী ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য সুমায়া চাকমা, বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য নিরুপম চাকমা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাশিকা চাকমা বলেন, উপজেলার বাঘাইছড়ি ও সারোয়াতলী ইউনিয়নে সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয় জুম্ম পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি, বাগান-বাগিচা, দোকানপাট ধ্বংস হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করেছি। তারপরও এখনও পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। তাই উপর্যুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। দুই ইউনিয়নের ১১ একর ৫৪ শতক জমির ঘরবাড়ি, দোকানপাট, বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে রাশিকা চাকমা আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত, বঞ্চিত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া গ্রামের প্রান্তিক মানুষ। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভূমি কমিশন গঠিত হলে, সর্বোপরি চুক্তিতে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের বিধান করা হলে আমরা অনেক আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু বিগত প্রায় ২৫ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছি।

তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, আমাদের মতামত, স্বার্থ ও অধিকারকে উপেক্ষা ও পদদলিত করে উক্ত সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ গ্রহণ করায় আমরা যারপরনাই গভীরভাবে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা মনেকরি, এই সড়ক নির্মাণ কাজের ফলে আমাদের সাংবিধানিক, নাগরিক ও মৌলিক মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে।

বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য নিরুপম চাকমা জানান, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে জেলার লংগদু, কাউখালী, বরকল, নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে এসব এলাকায় বসতিস্থাপন করে বসবাস করে আসছেন। এলাকায় বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগান গড়ে তোলে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তিনি আরো বলেন, সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে দুই ইউনিয়নের মধ্যকার ১৯ কিলোমিটার সড়ক পার্শ্ববর্তী ১৮৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদেরকে এখনো কোনো ক্ষতিগ্রস্ত দেওয়া হয়নি। স্থানীয় গ্রামবাসীরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করলেও এখনো সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নিম্নোক্ত দাবিসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়-

১. অবিলম্বে উক্ত সড়ক নির্মাণের  ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

২. অবিলম্বে ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা;

৩. অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

উল্লেখ্য,  গত ৩১ জুলাই ২০২২ তারিখ ২৭ বিজিবি মারিশ্যা জোনের জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শরীফুল আবেদ (এসজিপি) বাঘাইছড়ি ও সারোয়াতলী ইউনিয়নের উগলছড়ি আর্য্যপুর থেকে কজইছড়িমুখ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এবং কজইছড়িমুখ থেকে মাঝিপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার ৩০ ফুট প্রশস্ত এই সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। এর পরপরই তার উপস্থিতিতেই সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এর সদস্যরা আর্য্যপুর বনবিহারের রাস্তার মুখ এলাকায় বুলডোজার ও ট্রাক্টর দিয়ে জোরপূর্বক আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীর দোকান ও মূল্যবান গাছ ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সাথে কোনো প্রকার আলোচনা ও তাদের সম্মতি ব্যতিরেকে উক্ত সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হলে এবং নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী সড়ক নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রথমে নির্মাণ কাজ বাতিল এবং পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। কিন্তু বিগত প্রায় তিন মাস যাবৎ এই সড়ক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া হলেও এবং এতে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর ভূমিসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহকে কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষসহ প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।