পাহাড়ের মানুষকে ভাগ করে শোষণ-নিপীড়ন টিকিয়ে রাখা যাবে না: ঢাকায় উষাতন তালুকদার

0
458

হিল ভয়েস, ২৫ নভেম্বর ২০২২, ঢাকা: ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কর্তৃক আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, পাহাড়ের মানুষকে ভাগ করে শোষণ-নিপীড়ন টিকিয়ে রাখা যাবে না। তারাও এদেশের মানুষ। তাদেরও সমভাবে বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন রাষ্ট্রের সত্তাকে মেনেই আমরা চুক্তি করেছি। সেই চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।

আজ (২৫ নভেম্বর ২০২২) সকাল ১০:০০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে আবার অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো এবং সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক অংশৈসিং মারমা। এছাড়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ঊষাতন তালুকদার আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে হবে, বোঝাতে হবে। না হলে বিরোধিতার সৃষ্টি হবে। এই চুক্তি কোনো চুরি করা জিনিস নয়, এই চুক্তি পাহাড়ে শান্তির জন্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞ সংবিধান বিশ্লেষকদের নিয়ে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই চুক্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে সেখানে নতুন করে কোন বিশেষ শাসনব্যবস্থা হচ্ছে না, ব্রিটিশ আমল থেকে সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা ছিলো। এই চুক্তি শুধু সেই শাসনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা। চুক্তির ধারা অনুযায়ী সেখানে স্থানীয়দের নিয়ে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হবে। এইটা কোনো আলাদা স্বাধীন দেশের পুলিশ নয়, এইটা বাংলাদেশের পুলিশই থাকবে। এখানেও তাদের বিরোধিতা।

তিনি আরো বলেন, চুক্তির মাধ্যমে গঠিত ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিত করতে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিছু দালাল সংগঠন হরতাল ডাকছে, বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু সরকার চুপ করে আছে কেন? কারণ তারা চায় না বৈঠক হোক। তারা চায় ভূমি সমস্যা জিইয়ে রাখতে। সরষের ভেতর ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে, বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ছাত্রনেতা নিপন ত্রিপুরা তার বক্তব্যে বলেন, এই চুক্তি হয়েছিলো তৎকালীন বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন, অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের দাবিতে, গ্রামে-গঞ্জে, শহরের আনাচে কানাচে সংগ্রাম চালিয়েছেন। আজ আমরা উত্তরসূরীরা তার চেয়েও অধিক আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠী যদি মনে করে যে, দমন-পীড়ন ও পাহাড়ি মানুষদের ভাগ করে শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখা যাবে, সেটা ভুল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যকেও পালিয়ে যেতে হয়েছিল। কাজেই এই রাষ্ট্রকে সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা বলেন, আজ সরকার মগ পার্টি, কুকি-চিন সহ আরো কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিয়ে যে একটা ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি দিয়ে আন্দোলন দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সেটা কখনো সফল হবে না। পার্বত্য চুক্তি যদি বাস্তবায়ন করা না হয় তবে সকল ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে বলেও হুশিয়ারী দেন তিনি।

মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক অংশৈসিং মারমা বলেন, চুক্তির মৌলিক ধারা অনুযায়ী ‘ভূমি অধিকার’ ফিরিয়ে দেওয়ার বদলে আজ চিম্বুকের ম্রো পাড়া, লামার শত শত একর জুম ভুমি বেদখলের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। লামার সরই ইউনিয়নে আদিবাসীদের জুম ভূমি পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা এই ধরনের নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জানাই।

সমাবেশের সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আপনি কথা বলতে পারবেন না। আপনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারবেন না। এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করে রেখেছে শাসকগোষ্ঠী। আপনারা দেখতে পাবেন যে, যারা চুক্তি বিরোধিতা করে ঘাপতি মেরে থাকেন তারা ২ ডিসেম্বর নাটক শুরু করবে, কনসার্ট করবে। কিন্তু এই ছাত্রসমাজ আন্দোলনের মাধ্যমে এইসব নাটক চুরমার করে দিবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন আদিবাসী যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।