খাগড়াছড়ি গণধর্ষণ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের অপরাধ স্বীকার, বিভিন্ন সংগঠনের শাস্তির দাবি

0
998

হিল ভয়েস, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০: খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী এক জুম্ম নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, এমজেএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন উক্ত গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।

খাগড়াছড়ি গণধর্ষণ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের অপরাধ স্বীকার

গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১) রামগড়ের তৈচালা পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মো: আমিন ওরফে নুরুল আমিন (৪০), ২) খাগড়াছড়ির কুমিল্লাটিলার মৃত আকবর আলীর ছেলে মো: বেলাল হোসেন (২৩), ৩) গুইমারার বড় পিলাকের মো: ইমরান হোসেনের ছেলে মো: ইকবাল হোসেন (২১), ৪) মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের মো: হাবিল মিয়ার ছেলে মো: আব্দুল হালিম (২৮), ৫) গুইমারার পশ্চিম বড়পিলাকের আব্দুল কাদেরের ছেলে মো: শাহিন মিয়া (১৯), ৬) রামগড়ের দারোগা পাড়ার আহম্মদ উল্লাহয়ের ছেলে মো: অন্তর (২০) এবং ৭) মাটিরাঙ্গার দক্ষিণ মুসলিম পাড়ার শামসুল হকের ছেলে মো: আব্দুর রশিদ (৩৭) প্রমুখ।

গ্রেফতারকৃত কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কারের বিক্রয়লব্দ ৪৮,০০০ টাকা, লুণ্ঠিত নগদ ৮,০০০ টাকার মধ্যে ৪,৯০০ টাকা, আসামী অন্তরের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত একটি মোবাইল সেট, দরজা ভাঙ্গার শাবল, ডাকাতি ও গণধর্ষণের সময় ব্যবহৃত ২টি ছোরা, ২টি দা, ১টি নাম্বার বিহীন সবুজ রঙের সিএনজি,গণধর্ষণ শেষে আসামীদের ফেলে যাওয়া একজোড়া প্লাষ্টিকের জুতা, যা পরবর্তী‍তে ধৃত রশীদ কর্তৃক তার নিজের জুতা বলে সনাক্তকৃত ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার এসপি মোহাম্মদ আবদুল আজিজের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তারকৃতদের সবাই খাগড়াছড়ি জেলার বলেও জানান এসপি।

গ্রেপ্তার হওয়া তিন জনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন ধর্ষণের শিকার নারীর মা। দুজন একে অপরকে শাহিন এবং ফারুক নামে ডাকাডাকি করছিল বলে জানান তিনি। তিনি জানান, তাদের বয়স ২০-২২ এর মতো। ‘মেয়েকে নরপশুদের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে আমাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়,’ বলেন তিনি।

২০০৫ সালে ভাইকে এবং ২০০৬ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকেই অসহায় এই নারী মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিলেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার ৩০০ থেকে ৪০০ গজের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুইটি চেকপোস্ট আছে।

ছবি: ধর্ষণকারী কর্তৃক বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাতের পর তছনছ।

বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা ও শাস্তির দাবি

খাগড়াছড়িতে মানসিক প্রতিবন্ধি জুম্ম নারীকে এবং সিলেটের এমসি কলেজে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর শনিবার এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান নাছিমা। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ধর্ষক যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উল্লেখিত ঘটনায় কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম মনে করেন, একের পর এক নারীর প্রতি নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণ্যতম ঘটনা- যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নারীর মানবাধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে ধর্ষণের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এই উদ্বেগ জানিয়েছে।

এমজেএফ বলছে, খাগড়াছড়ি সদর থানায় নিজ বাড়িতে এক চাকমা নারী এবং কাছাকাছি সময়ে বেনাপোলে দুই কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। খাগড়াছড়িতে অপরাধীরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। অন্যদিকে যশোরের ঝিকরগাছা দিয়ে ওই দুই কিশোরীকে ভারতে পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

এমজেএফ অবিলম্বে এ সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আইনি প্রক্রিয়ায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও প্রতিবন্ধী নারী এবং শিশুরা সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় আছে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী জুম্ম নারীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গত শুক্রবার ২৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪:০০ টার সময় পাহাড়ের চার সংগঠন চট্টগ্রাম নগরীতে এবং ঢাকায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (শ্রমজীবী ফ্রন্ট) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। যথাক্রমে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এবং টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে উক্ত সমাবেশ দু’টি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ তঞ্চংগ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরাম, সেচ্ছাসেবী সংগঠন উন্মেষসহ সম্মিলিত ছাত্র ও সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে এই মানববন্ধন হয়।

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর রবিবার বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমএসসি) ও ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম (টিএসএফ) যৌথভাবে খাগড়াছড়ি বলপিয়া আদামে প্রতিবন্ধী নারীকে জোরপূর্বক গণ-ধষর্ণকারীদের গ্রেফতার পূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের প্রাঙ্গণে মিছিলের পরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবন্ধী জুম্ম নারীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ও গ্রেফতারকৃত কঠোর শাস্তির দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা এবং পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে আদিবাসী প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণ ও সিলেটে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ এর উদ্যেগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।